খরগোশ এর ভিন্ন-ভিন্ন আচরণ
আমরা অনেক সময়ই খরগোশ এর বিভিন্ন আচরণ লক্ষ্য করে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি কেন তারা এরকম ভিন্ন-ভিন্ন আচরণ করে? আসুন জেনে নেই তাদের আচরণ সম্বন্ধে বিস্তারিত।
Flattening বা সমান্তরাল অবস্থায় থাকা: খরগোশ এই অবস্থায় থাকলে বুঝতে হবে ওরা আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছে এবং কাওকে তাদের আশেপাশে চাচ্ছেনা। খরগোশ চিন্তিত হলেও ওরা মাটির সাথে শরীর এলিয়ে থাকে যাতে তারা যেকোনো সময় ফাইট করতে পারে বা নিজেদের রক্ষা করতে পারে।(ছবিঃ১)
Allert বা সতর্ক থাকাঃ খরগোশ অনেক সময় কান খাড়া করে থাকে এর মানে সে সতর্ক হয়ে আছে। খরগোশ এর শ্রবণ শক্তি মানুষের থেকেও প্রখর হয়। কিছু শব্দ থাকে যেগুলো মানুষ শুনতে না পেলেও খরগোশ ঠিকই শুনতে পায়। (ছবিঃ২)
Periscope বা পেরিস্কোপিংঃ পেরিস্কোপ আমরা কম বেশি সবাই ই চিনি। পেরিস্কোপ থেকেই পেরিস্কোপিং শব্দ টা এসেছে। পেরিস্কোপ একটা যন্ত্রের নাম যার মাধ্যমে দুরের জিনিস ক্লিয়ারলি দেখা যায়। খরগোশ এর পেরিস্কোপিং এমন একটা অবস্থা যেই অবস্থায় তারা লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারা যখন কোনো কিছু নিয়ে কৌতুহল হয় অথবা ভালো করে কোনো কিছু দেখতে চায় তখন তারা লম্বা হয়ে দাঁড়ায় এবং এই অবস্থা কে পেরিস্কোপিং বলা হয়।(ছবিঃ৩)
কান ঝাকানোঃ খরগোশ রা কোনো কিছু নিয়ে খুশি হলে বা এক্সাইটেড হলে কান নাড়ায়।
এছাড়া কানে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা পোকা মাকড় বসলেও তারা কান নাড়ায়। কান চুলকালেও তারা কান নাড়ায়। যখন ওরা দৌড়ায় বা খেলে, তখন তাদের কাছে গেলে বা তাদের ধরতে গেলেও তারা কান নাড়ায়, তারমানে হলো তারা ওই মুহুর্তে কোলে উঠতে, আদর নিতে বা মানুষের সান্নিধ্যে আসতে চায়না। তাই সেরকম দেখলে তাদের বিরক্ত করা উচিত না।(ছবিঃ৪)
Sniffing বা কোনো কিছু শোঁকাঃ যখন খরগোশ তাদের নাক ক্রমাগত নাড়াতে থাকে, সেই অবস্থা কে বলা হয় Sniffing/স্নিফিং। যখন খরগোশ স্নিফিং করে তারমানে হলো তারা কোনো বিষয় নিয়ে কোতুহল এবং কোনো কিছু আবিষ্কার করতে চাচ্ছে। আবার নাক দিয়ে শুকে শুকে তারা তাদের পথ চিহ্নিত করে কারণ খরগোশ দের দৃষ্টিশক্তি মানুষের তুলনায় অনেক দুর্বল হয়।(ছবিঃ৫)
Sprawling বা বিস্তৃত হয়ে শোয়াঃ এই অবস্থায় খরগোশ রা তাদের পেট ফ্লোরে লাগিয়ে বিস্তৃত হয়ে শুয়ে থাকে। এই অবস্থায় থাকা মানে হলো সে কম্ফোর্টেবল এবং সে সেফ ফিল করছে। এভাবে থাকলে বুঝতে হবে সে আপনাকে বিশ্বাস করে এবং আপনার সাথে থাকতে কম্ফোর্টেবল। এছাড়াও এই পজিশনে ওরা থাকলে বুঝতে হবে তাদের শরীর এর তাপমাত্রা বেড়েছে এবং পেট ফ্লোরে দিয়ে সে ঠান্ডা হচ্ছে।(ছবিঃ৬)
Throwing বা ছুড়ে ফেলাঃ খরগোশ অনেক সময় তাদের আশেপাশে যা পায় যেমনঃ পানির বাটি,খেলনা, খাবারের বাটি ইত্যাদি মুখ দিয়ে তুলে ছুড়ে ফেলতে চায়। এরকম ওরা হতাশায় ভুগলে বা মন খারাপ থাকলে করে আবার খেলার জন্যেও করে।(ছবিঃ৭)
Boxing বা মারামারিঃ এই অবস্থায় তারা দাঁড়িয়ে যায় এবং সামনের দুই হাত উচু করে কাওকে এটাক করার চেষ্টা করে। এমন করলে বুঝতে হবে খরগোশ টা খুশি না এবং রাগান্বিত হয়ে আছে। কিন্তু অনেক সময় তারা সাধারণ ভাবে দাঁড়ায় ও এভাবে।(ছবিঃ৮)
Grooming বা পরিষ্কার করাঃ খরগোশ দের Self cleaning animal বলা হয় কারণ তারা নিজেরা নিজেদের পরিষ্কার রাখে। তারা তাদের দুই হাত দিয়ে মুখ ও কান পরিষ্কার করে এবং জিভ দিয়ে পুরা শরীরে চাটে।(ছবিঃ৯)
Flopping বা শুয়ে পড়াঃ এই অবস্থায় তারা হুট করে শুয়ে পড়ে। তারা এমন অবস্থায় শুয়ে থাকে যে অনেকে দেখে মনে করেন খরগোশ টা অসুস্থ বা মারা গেছে। আসলে তারা এরকম তখনই করে যখন তারা খুশি থাকে এবং সেইফ ফিল করে।(ছবিঃ১০)
Cautious বা সতর্ক হওয়াঃ এটা খরগোশ এর কমন একটা বিহেভিয়ার। এই অবস্থায় তারা আশেপাশে মুখ বাড়িয়ে শুখতে থাকে অর্থাৎ তারা সতর্ক হতে থাকে।(ছবিঃ১১)
Butt twitching বা লেজ নাড়ানোঃ খরগোশ রা লেজ তখনই নাড়ায় যখন তারা খুশি হয়।(ছবিঃ১২)
Binkying বা জোরে লাফানোঃ যখন খরগোশ রা অত্যাধিক খুশি এবং এক্সাইটেড হয়ে যায় তখন তারা বড় বড় লাফ দেয়। লাফ দেয়ার মাধ্যমে বোঝায় যে তারা খুশি।(ছবিঃ১৩)
Nesting বা বাসা বানানোঃ এই বিহেভিয়ার টা ফিমেল খরগোশ এর লক্ষ্য করা যায়। তারা যখন প্রেগন্যান্ট হয় তখন তারা বিভিন্ন কাগজ, কাপড় বা খড় মুখে করে এনে জড়ো করে বাসা বানাতে চায় তাদের বাচ্চার জন্য।(ছবিঃ১৪)
Circleling বা চারিদিকে ঘোরাঃ অনেক সময় খরগোশ তার মালিকের পায়ের কাছে যেয়ে পায়ের চারিদিকে ঘুরতে থাকে। এর মানে হলো সে তার মালিক কে পছন্দ করে, ভালোবাসে। খরগোশ এক্সাইটেড হয়ে গেলে বা খুশি হলে এমন করে থাকে। আবার কারোর কাছে খাবারের গন্ধ পেলেও তারা পায়ের কাছে ঘুরতে থাকে খাবার পাওয়ার আশায়।(ছবিঃ১৫)
Loafing বা গোল হয়ে বসাঃ খরগোশ অনেকসময় গোল হয়ে বসে থাকে, দেখতে অনেকটা বলের মতো লাগে। এই অবস্থা কে Loafing/লয়াফিং বলে। এভাবে বসা বা ঘুমালে বুঝতে হবে খরগোশ কম্ফোর্টেবল আছে। শীতকালে খরগোশ রা সাধারণত এভাবে ঘুমায়।(ছবিঃ১৬)
Licking বা পি করাঃ হিটে আসলে সাধারণত খরগোশ রা যেখানে সেখানে লিক করে বা পি করে। এছাড়া তারা তাদের জায়গা চিহ্নিত করতেও এমন করে থাকে।(ছবিঃ১৭)
Digging বা খোড়াঃ খরগোশ অনেক সময় হাত দিয়ে মাটি খোড়ার মতো ফ্লোরে খোড়ার চেষ্টা করে। এটা খরগোশ এর খুবই কমন এবং নরমাল আচরণ। তারা বাসা বানাতে চাওয়ার জন্য ফ্লোর কে মাটি ভেবে খুড়তে চায়।(ছবিঃ১৮)
রিল্যাএক্স এবং কনফিডেন্ট থাকাঃ খরগোশ রা তাদের কান ৪৫° কোণে রাখলে বুঝতে হবে তারা রিল্যাক্স এবং কনফিডেন্ট আছে।(ছবিঃ১৯)
ভালো থাকুন এবং ভালো রাখুন আপনাদের খরগোশকে।
ধন্যবাদ।
Faozia Fariha
Admin
Rabbit Welfare Society of Bangladesh.
আমাদের গ্রুপ লিংক ঃ https://www.facebook.com/groups/rwsbd
আমাদের পেজ লিংক ঃ https://www.facebook.com/rwsbangladesh